প্রেমের কবিতা / দাউদ হায়দার
প্রেমের কবিতা
দাউদ হায়দার
মূল্য : ২৫০/=
২৫% কমিশন বাদে মূল : ১৮৭.৫০/=
কবি দাউদ হায়দার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলাতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে নির্বাসিত হন তিনি। বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জন্মই আমার আজন্ম পাপ, সম্পন্ন মানুষ নই, যে দেশে সবাই অন্ধ প্রভৃতি।
একজন দাউদ হায়দার ও
‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’
দাউদ হায়দার একজন বাংলাদেশি বাঙালি কবি, লেখক ও সাংবাদিক। যিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশ থেকে নির্বাসনের পর বর্তমানে জার্মানিতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। তিনি বর্তমানে একজন ব্রডকাস্টিং সাংবাদিক। দাউদ হায়দার সত্তর দশকের একজন আধুনিক কবি। তাঁর বিখ্যাত কাব্যের নাম ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’।
সত্তর দশকের শুরুর দিকে দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোসাইটি ফর পোয়েট্রি দাউদ হায়দারের কোন এক কবিতাকে “দ্যা বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া” সম্মানে ভুষিত করেছিল। সংবাদের সাহিত্যপাতায় 'কালো সূর্যের কালো জ্যোৎসায় কালো বন্যায়' নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন।
ধারণা করা হয়ে থাকে, তাঁর ওই কবিতায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), যিশুখ্রিষ্ট এবং গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কিত অবমাননাকর উক্তি ছিল। যা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছিল। তাঁর সংগস অব ডেস্পায়ার বইতে এই কবিতাটি সঙ্কলিত আছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে মৌলবাদী গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিবাদ শুরু করে। ঢাকার এক কলেজ-শিক্ষক ঢাকার একটি আদালতে এই ঘটনায় দাউদ হায়দারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে কবিকে নিরাপত্তামূলক কাস্টডিতে নেয়া হয়। ১৯৭৪ এর ২০ মে সন্ধ্যায় তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ২১ মে সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটা রেগুলার ফ্লাইটে করে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়। ওই ফ্লাইটে তিনি ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিল না।
তাঁর কাছে সে সময় ছিল মাত্র ৬০ পয়সা এবং কাঁধে ঝোলানো একটা ছোট ব্যাগ (ব্যাগে ছিল কবিতার বই, দু'জোড়া শার্ট, প্যান্ট, স্লিপার আর টুথব্রাশ)। কবির ভাষায়- “আমার কোনও উপায় ছিল না। মৌলবাদীরা আমাকে মেরেই ফেলত। সরকারও হয়ত আমার মৃত্যু কামনা করছিল।”
কলকাতা ছিল তার কাছে একদম অচেনা। কাউকেই চিনতেন না। দমদম এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমে কাঁদছিলেন। কলকাতায় তিনি সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষ এর কাছে প্রথম আশ্রয় পান। তিনি সেখানে একমাসের মতো ছিলেন। তিনি সেখানে লেখালেখি শুরু করেন। কলকাতার কঠিন বাস্তবতার মাঝে তিনি দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় লেখা শুরু করেন।
তার জীবনে প্রেমও আসে সেখানে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী, তাকে প্রেম নিবেদন করে। তারপরও তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি একা কলকাতা শহরের মতোই। তিনি সেখানে একজন আগন্তুক মাত্র। ১৬ আগস্ট ২০০৯ সালের সমকালে লেখা তাঁর কলামে (বঙ্গবন্ধু ও অন্নদাশঙ্কর) দেখা যায় ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'আন্তর্জাতিক তুলনামূলক সাহিত্যের' ছাত্র ছিলেন। কলকাতায় তিনি সমাদৃত হন। অন্নদাশঙ্কর রায় তাকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন।
নির্বাসিত অবস্থায় ১৯৭৯ সালে তিনি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নবায়ণের জন্য পাসপোর্ট জমা দিলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। দাউদ হায়দারকে ভারত থেকেও নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে পেন আমেরিকান সেন্টারের ২০০০ লেখকের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা চিঠি লেখা হয় যাতে দাউদ হায়দারকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার অনুরোধ করা হয়।
জার্মানির নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টারগ্রাসের সহযোগিতায় ২২ জুলাই ১৯৮৭ সালে তিনি জার্মানির বার্লিন শহরে যান এবং তারপর থেকে সেখানেই আছেন। উল্লেখ্য তিনি বার্লিন যাত্রায় পাসপোর্টের পরিবর্তে জাতিসংঘের বিশেষ ট্র্যাভেল পাস ব্যবহার করেছেন। এ ব্যাপারে তখন জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় কর্মরত শামসুল বারী তাঁকে অনেক সাহায্য করেন। দাউদ হায়দার পরে এই জাতিসংঘের ট্র্যাভেল পাস ব্যবহার করে বহু দেশ ঘুরেছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি জার্মানিতে সাংবাদিক হিসেবে চাকুরি শুরু করেন।
তিনি প্রায় ৩০টির মতো বই লিখেছেন জার্মান, হিন্দি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জাপানি ও স্প্যানিশ ভাষায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে আছে-সংগস অব ডেস্পায়ার (১৯৯২), এই শাওনে পরবাসে (১৯৮২), বানিশম্যান্ট (১৯৭৯), আমি পুড়েছি জ্বালা ও আগুনে (১৯৮২), এলোন ইন ডার্কনেস অ্যান্ড আদার পোয়েমস (১৯৭৮), হোল্ডিং অ্যান আফটারনুন অ্যান্ড আ লিথ্যাল ফায়ার আর্ম (১৯৮১), অবসিডিয়ান, সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য, জন্মই আমার আজন্ম পাপ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন