শ্রেষ্ঠগল্প সমরেশ বসু
শ্রেষ্ঠগল্প
সমরেশ বসু
ভূমিকা : সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
মূল্য : ৪৫০/=
২৫% কমিশন বাদে মূল : ৩৩৭.৫০/=
খ্যাতিমান বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক সমরেশ বসু। যাদের লেখনী বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ এবং পরিপকস্ফ করেছে, সমরেশ বসু সেই শীর্ষ সারির প্রতিভাবান লেখকদের একজন। বিচিত্র স্বাদের বহু উপন্যাসের জনক তিনি। বাংলা কল্পকাহিনিরও প্রথম সারির লেখক তিনি। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন, যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে ওঠে। তার ছদ্মনাম ছিল কালকূট ও ভ্রমর। 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে', 'সাম্ব', 'কোথায় পাবো তারে'সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। 'কালকূট' ছদ্মনামে লেখা 'শাম্ব' উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮০ সালে আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসু ১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার রাজনগর গ্রামে পৈতৃক বাস্তুভিটায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মোহিনী মোহন বসু। মায়ের নাম শৈবালিনী বসু। সমরেশ বসুর জন্মের সময় বাবার এক মাসিমা সদ্যোজাত সমরেশকে দেখতে এসে বলেছিলেন, 'এ যে তড়বড় কইরা আইয়া পড়ল'। বাবার দেওয়া নাম 'সুরথনাথ'। সমরেশ বসুর শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। এক সময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন। ১৯৪৩-৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুরের কামান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যেও লেখালেখিই ছিল তার একমাত্র পেশা। নিজ আদর্শ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি তিনি। এক সময় ট্রেড ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি অবৈধ ঘোষিত হলে ১৯৪৯-৫০ সালে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। জেলে অবস্থানকালে তিনি প্রথম উপন্যাস 'উত্তরঙ্গ' লিখেন। মুক্ত হয়ে সমরেশ বসু লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ২১ বছর বয়সে উপন্যাস 'নয়নপুরের মাটি' লিখেন।
সমরেশ বসু জীবনকে যেমন বহুভাবে বহু দিক থেকে দেখেছেন, তেমনি সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছেন সেভাবে। 'সাহিত্যের যা কিছু দায় সে তো জীবনের কাছেই'- এই ছিল সমরেশ বসুর কথা। তার বই যে খুব বেশি বিক্রি হতো তা নয়। খুব যে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি এমনও বলা যাবে না। তবু কয়েক দশক ধরে সিংহের মতোই তিনি বিচরণ করেছেন সাহিত্যের অঙ্গনে। সমরেশ বসু নিজ নামে এবং কালকূট ছদ্মনামে ২০০ ছোটগল্প এবং ১০০ উপন্যাস রচনা করেন। তার প্রকাশিত গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে উত্তরঙ্গ, গঙ্গা, বিবর, প্রজাপতি, দেখি নাই ফিরে, কোথায় পাবো তারে, বাঘিনী, স্বীকারোক্তি, অপদার্থ, শাম্ব, শ্রীমতি কাফে, অবশেষে, জবাব, তিন পুরুষ, দাহ প্রভৃতি রয়েছে।
বাংলা কথাসাহিত্যে সমরেশ বসুর তুলনা সমরেশ বসুই। 'গঙ্গা' সমরেশ বসু রচিত শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর অন্যতম ধ্রুপদি বাংলা উপন্যাস। আর্থসামাজিক কাহিনির সঙ্গে প্রচুর উপকথা-মিথের ব্যবহার এই উপন্যাসকে বিশিষ্টতা দান করেছে। এই উপন্যাসটি লেখক তথা বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা বলে বিবেচিত হয়।
বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে আমৃত্যু ক্রিয়াশীল ক্ষণজন্মা লেখক সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। মৃত্যুর সময়েও তার লেখার টেবিলে ছিল ১০ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে লেখা উপন্যাস। সমরেশ বসুর নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। প্রায় ৫ লাখ শব্দের 'চিরসখা' নামের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু।
সমরেশ বসু [১১ ডিসেম্বর ১৯২৪-১২ মার্চ ১৯৮৮]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন