মির্জা গালিব বাংলায়ণ / মোহাম্মদ মাহবুব আলী

 
মির্জা গালিব
বাংলায়ণ : মোহাম্মদ মাহবুব আলী
মূল্য : ৩৫০/=
২৫% কমিশন বাদে মূল : ২৬২.৫০/=
 
 
মির্জা গালিব জীবনী–
গালিব কখনো তার জীবিকার জন্য কাজ করেননি। সারা জীবনই তিনি হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ধার কর্য করে নতুবা কোনো বন্ধু উদারতায় জীবন যাপন করেন। মির্জা গালিব এর খ্যাতি আসে তার মৃত্যুর পর। মির্জা গালিব তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দিবে। ইতিহাস এর সত্যতা প্রমাণ করেছে। উর্দূ কবিদের মধ্যে তাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি লেখা হয়েছে। আধুনিক উর্দু গদ্যের জনক মির্জা গালিবের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । মির্জা গালিব জীবনী বা জীবন কথা নিয়ে বা জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 
মির্জা গালিব কে ছিলেন ?
মির্জা গালিব ছিলেন ভারতবর্ষে মোঘল-সম্রাজ্যের শেষ ও ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকের একজন উর্দু এবং ফার্সি ভাষার কবি । সাহিত্যে তার অনন্য অবদানের জন্য তাকে দাবির-উল-মালিক ও নাজিম-উদ-দৌলা উপাধি দেওয়া হয়। মির্জা গালিব এর সময়কালে ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় এবং শেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহীবিদ্রোহ এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা পুরোপুরিভাবে মোঘলদের ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন দখল করে, তিনি তার লেখায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মহাবিদ্রোহের সময়কার তার লেখা সেই দিনলিপির নাম দাস্তাম্বু। তিনি জীবনকালে বেশ কয়েকটি গজল রচনা করেছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন ও গেয়েছেন। মির্জা গালিবকে মোঘল সম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ায় তাকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। আজ শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে। 
আধুনিক উর্দু গদ্যের জনক মির্জা গালিবের জীবনী–  
নাম-মির্জা গালিব 
জন্ম-ডিসেম্বর ২৭ ১৭৯৭ 
জন্মস্থান-আগ্রা মুঘল সাম্রাজ্য সময়কাল মুঘল আমল 
পেশা-কবি 
ছদ্মনাম-আসাদ, গালিব 
জাতীয়তা-ভারতীয় 
ধরন-গজল, বিষয় প্রেম, দর্শন 
মৃত্যু-ফেব্রুয়ারি ১৫ ১৮৬৯
মির্জা গালিব জন্ম– 
উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উর্দু কবি মির্জা গালিবের পুরাে নাম মির্জা আব্দুল্লাহ বেগ খান গালিব । তিনি ১৭৯৭ সালের ২৭ শে ডিসেম্বর আগ্রা শহরের একবর্ধিষ্ণু ধনী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি যখন জন্মলাভ করেন , তখন মুসলিম শক্তি ( মােঘল আমল ) ভারতবর্ষ থেকে প্রায় বিদায় নিতে চলেছে । পাশ্চাত্যের ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমে ক্রমে প্রভাব – প্রতিপত্তি বিস্তার করছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় । মির্জা গালিব আগ্রায় জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন । 
মির্জা গালিবের শিক্ষাজীবন–
মির্জা গালিব স্কুলে উর্দু এবং ফারসী ভাষায় প্রারম্ভিক কিছু লেখাপড়ার পর কবিতা রচনা শুরু করেন উর্দুতে। তিনি উর্দু–ভাষায় অতি উৎকৃষ্টমানের সব কবিতা রচনা করতেন । আস্তে আস্তে তিনি কবি হিসাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন । তার কবিখ্যাতি কিংবদন্তীর মতাে । তার মতাে এতাে সুন্দর উর্দুকবিতা এই উপমহাদেশে আর একজনও লিখেছেন কিনা সন্দেহ আছে । শুধু কাব্যসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে নয় , তিনি আধুনিক উর্দুভাষার । একজন গদ্যলেখক হিসাবেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন । উর্দু সাহিত্যকে একটা সম্মানজনক দৃঢ় ভিত্তির উপর উপমহাদেশে । প্রতিষ্ঠা করতে তার অবদান অনস্বীকার্য । 
মির্জা গালিবের সুনাম ছড়িয়ে পড়া–
উর্দু ও ফারসী ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসাবে শুধু ভারতবর্যে নয়, মির্জা গালিবের সুনাম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে পড়ে । বিশেষকরে আরব দেশগুলিতে তিনি খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন । মির্জা গালিব একজন প্রতিভাসম্পন্ন স্বতন্ত্র ধারার কবি। গভীর অনুভূতি প্রবণতা মননশীলতা এবং আধ্যাত্মিকতার কারণে তারকবিতাগুলােকে সহজেই আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় । এছাড়া । তার কবিতাগুলােকে একটি শক্তিশালী রােমান্টিক আবহও ঘিরে থাকে সব সময় , যার ফলে তার কবিতাগুলাে পড়বার সময় পাঠকদের মনে একটা মুখতার প্রভাব পড়ে । 
মির্জা গালিব আধুনিক উর্দু গদ্যের জনক–
মির্জা গালিবের কবিতাসমূহ দেওয়ানি গালিব ’ নামে দশখন্ডে প্রকাশিত কবিতা সমগ্র বিধৃত আছে । এগুলি ভারতীয় কয়েকটি ভাষা এবং বিদেশি ভাষাতেও অনুদিত হয়েছে । লেখক ও কবি হিসাবে মির্জা গালিব খুব সহজ সরল বাক্য ব্যবহার করা পছন্দ করতেন । উর্দু গদ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তাকে আধুনিক উর্দু গদ্যের জনক বলা হয় । 
মির্জা গালিবের গদ্য রচনা–
মির্জা গালিব বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অনেক চিঠিপত্র লিখেছিলেন । তার সেইসব চিঠিপত্রের দুটি সংকলন উর্দু–ই–হিন্দ এবং উর্দু–ই–মুল্লাহ খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে । এছাড়া তার আরাে কতগুলাে উল্লেখযােগ্য গদ্য রচনা হচ্ছে নামই ‘গালিব লাতিফ গায়েবি’ ইত্যাদি । মির্জা গালিবের রচনাবলীর মধ্যে তার সমকালীন সমাজের দীপ্ত প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে । 
মির্জা গালিবের বিবাহ জীবন–
মির্জা গালিবের বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর, তখন তার বিয়ে দেওয়া হয়। তার স্ত্রীর নাম ছিলাে উমরাে বেগম। মির্জা গালিব খুবই বিলাসবহুল এবং অমিতব্যয়ী জীবনযাপন করতেন । যার ফলে ধনী লােকের সন্তান হলেও শেষ জীবন তার দরিদ্রের মধ্যে কাটে এবং তিনি বিপুলভাবে ঋণগ্রস্ত হন । মির্জা গালিবের মৃত্যু–
মির্জা গালিব ১৮৬৯ সালে ৭২ বছর বয়সে মারা যান ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাঙালী জীবনে রমণী / নীরদচন্দ্র চৌধুরী

শ্রেষ্ঠগল্প সমরেশ বসু

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী / ড. মজহারুল ইসলাম