আবু ইসহাক উপন্যাস সমগ্র
বাংলা সাহিত্য রচনাসম্ভার সংখ্যার বিচারে স্বল্প হলেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নাম আবু ইসহাক। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৌলভী মোহাম্মদ এবাদুল্লা ও আতহারুন্নিসা দম্পত্তির ছয় সন্তানের মধ্যে আবু ইসহাক ছিলেন পঞ্চম। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের খণ্ডচিত্র যেমন স্থান পেয়েছে তার লেখনিতে তেমনি বাংলার স্বাধীনতা পরবর্তী চিত্রও তুলে ধরেছেন তাঁর সাহিত্যকর্মে। আবু ইসহাক বাংলা ভাষার নতুন ধরনের অভিধান প্রণেতা হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা সাহিত্য রচনাসম্ভার সংখ্যার বিচারে স্বল্প হলেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নাম আবু ইসহাক। সাহিত্যিক আবু ইসহাক জন্মগ্রহণ করেন–১ নভেম্বর ১৯২৬ সালে, শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার শিরঙ্গল গ্রামে। বিশিষ্ট এই সাহিত্যিকের শিক্ষা জীবন–নড়িয়া ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে এসএসসি, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ হতে ১৯৪৪ সালে এইচএসসি এবং করাচি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬০ সালে স্নাতক। স্বামী পরিত্যক্তা জয়গুনের দু-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, গ্রাম ছেড়ে নগরজীবন গ্রহণ, আবার গ্রামেই ফিরে আসলে সমাজপতিদের ধর্বান্ধতা ও প্রতিহিংসা প্রভৃতি যে উপন্যাসের বিষয়বস্তু–আবু ইসহাকের ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের। সূর্য-দীঘল বাড়ী’ বিখ্যাত এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়–ধারাবাহিকভাবে (১৯৫০-৫১) পর্যন্ত মাসিক নওবাহার পত্রিকায় (গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে)। আবু ইসহাক ‘সূর্য- দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের তুলে ধরেছেন–বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশ ভাগ। আবু ইসহাকের প্রথম প্রকাশিত রচনার নাম–১৯৪০ সালে নবযুগ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অভিশাপ’ গল্পটি। ’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন–শেখ নিয়ামত আলী ও মসীহউদ্দিন শাকের (১৯৭৯) সালে । পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত, খুন, হিংসা বিদ্বেষ, স্বার্থপর মানুষের সম্পদের লোভ প্রভৃতি যে উপন্যাসের আলোচ্য বিষয়–আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের । ’পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়–প্রথমে বাংলা একাডেমির ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘মুখর মাটি’ নামে (১৯৮৬) সালে। এই উপন্যাসে প্রধান প্রধান চরিত্রের মধ্যে রয়েছে–জরিনা, রূপজাল, ফজল, এরফান মাতবর, জঙ্গুরুল্লা প্রভৃতি। ”লাঠির জোরে মাটি, লাঠালাঠি কাটাকাটি, আদালতে হাঁটাহাঁটি, এই না হলে চরের মাটি, হয় কবে খাঁটি”-উক্তিটি যে উপন্যাসের –আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসের। লেখক যখন পুলিশ ছিলেন তখন বেশ কিছু জাল নোটের মামলা তদন্ত করেছিলেন সেই আলোকে রচনা করেছিলেন–‘জাল’ উপন্যাস। আবু ইসহাকের উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়–আনন্দ পত্র পত্রিকায় (১৯৮৮ সালে)। আবু ইসহাকের গল্প গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – হারেম (১৯৬২) ও মহাপতঙ্গ (১৯৬৩) । নিজের জীবনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন তাঁর নকশাধর্মী রচনা–‘স্মৃতিবিচিত্র’ নামক স্মৃতিকথায় । ’জয়ধ্বনি’ আবু ইসহাকের যে শ্রেণির রচনা–একমাত্র নাটক (ধানশালিকের দেশ পত্রিকায় ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়)। ’একটি ময়নার আত্মকাহিনী’ তাঁর যে শ্রেণির রচনা–ছোট গল্প (লেখকের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার কাহিনী) । সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ আবু ইসাহকের যে শ্রেণির রচনা–বাংলা ভাষার অভিধান। আবু ইসহাক রচিত ‘ সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ ‘অন্ধকার’ শব্দের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করেছেন–১২৭ টি। ’বারে বা, বড় পাখির বড় রং, আণ্ডা পাড়ার দেখ ঢং, উক্তিটি আবু ইসহাকের যে রচনার– ‘মহাপতঙ্গ’ নামক ছোট গল্পের । তাঁর মহাপতঙ্গ গল্পে যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন–একজোড়া চড়ুই পাখির জবানিতে একদিকে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ অন্যদিকে বিজ্ঞানের অভিশাপ। ’সূর্য-দীঘল বাড়ী’ আবু ইসহাকের যে শ্রেণির রচনা–সামাজিক উপন্যাস । ওসমান, তোতা মিয়া, টুনি, করিম গাজী, নবুখা প্রভৃতি যে গল্পের চরিত্র–আবু ইসহাকের ‘জোক’ নামক ছোট গল্পের । সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আবু ইসহাক যে যে পুরস্কার লাভ করেন–বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলাদেশ লেখক সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০), একুশে পদক (১৯৯৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর, ২০০৬) প্রভৃতি । কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় – আবু ইসহাককে ১৯৭৬ সালে। স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক ও বিশিষ্ট অভিধান প্রণেতা আবু ইসহাক মৃত্যুবরণ করেন–২০০৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি (মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়)।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন